September 27, 2025, 5:07 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশকে চিঠি পাঠিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য প্রবেশের ক্ষেত্রে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার সরকার। যা আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।
বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ওপর গত ২ এপ্রিল উচ্চ হারে পারস্পরিক বা পাল্টা শুল্ক (রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ) আরোপ করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে তা তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখার ঘোষণা দেন তিনি, যে সময়সীমা শেষ হবে আগামীকাল ৯ জুলাই। এ সময়ের মধ্যে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দরকষাকষি শুরু হয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশকেও রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ বিষয়ক বাণিজ্য চুক্তির খসড়া পাঠিয়েছে দেশটি। কিন্তু ৯ জুলাইয়ের মধ্যে চুক্তি হওয়া নিয়ে সংশয় এখনো কাটেনি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
এরই মধ্যে কিছু দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করেছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আরো বেশকিছু চুক্তি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অন্য দেশগুলোর ক্ষেত্রে কী হবে তা পরিষ্কার করেননি তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসান্টও একই কথা জানিয়ে বলেন, ৯ জুলাইয়ের সময়সীমা মাথায় রেখে নতুন অনেক দেশ তাদের কাছে চুক্তির প্রস্তাব পাঠিয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনার শিডিউল পাচ্ছে না বাংলাদেশ। এ কারণে বাংলাদেশ এখনো চুক্তির বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি। একটি মিটিং হয়েছে। আরেক দফা মিটিং হবে ৯ জুলাই। সেই বৈঠকে উভয়পক্ষ একমত হলে দ্রুতই চুক্তি সম্পন্ন হবে।
গত ২৬ জুন ওয়াশিংটনে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অংশ নেন অন্তর্র্বতী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খালিলুর রহমান। ৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরেকটি সভা হয়। ওই সভায় যোগ দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি জানিয়েছিলেন, ট্যারিফ আরোপ করা হলেও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা অটুট রাখা নিয়ে সংবেদনশীল।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ট্যারিফ হার ছাড়াও চুক্তির বিভিন্ন শর্ত বা দিক নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে। তারা বলছেন, এ চুক্তির অনেক শর্ত কোনো সার্বভৌম দেশের পক্ষে মানা কঠিন। ক্ষেত্রবিশেষে এ বিষয়গুলো ট্যারিফ হারের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। যেমন চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র যদি কোনো দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়, সেটা বাংলাদেশকেও অনুসরণ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র যদি কোনো একটি দেশের কোনো প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়, সেটাও বাংলাদেশকে অনুসরণ করতে হবে। কোনো দেশের ওপর যদি তারা অতিরিক্ত কোনো শুল্ক আরোপ করে, তাহলে বাংলাদেশকেও তা করতে হবে।
এছাড়া নির্দিষ্ট একটি দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা ও সমরাস্ত্রবিষয়ক কোনো ইস্যুতে বাংলাদেশ জড়াতে পারবে না এমন শর্তও দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। এ বিষয় নিয়ে ঢাকায় কর্মরত যুক্তরাষ্ট্র সরকারসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, চীনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা ও সমরাস্ত্রবিষয়ক কোনো ইস্যুতে বাংলাদেশ যেন সম্পৃক্ত না হয়—এমন কিছু শর্ত থাকতে পারে বলে ধারণা দেয়া হয়েছে।
চীনের সঙ্গে প্রতিরক্ষাবিষয়ক চুক্তিতে জড়ানো যাবে না—এমন কোনো বিষয় চুক্তির খসড়ায় উল্লেখ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, সুনির্দিষ্ট দেশের নাম উল্লেখ করে এ রকম কোনো বিষয় চুক্তিতে লেখা নেই। অর্থাৎ নির্দিষ্ট দেশের নাম উল্লেখ করে চুক্তির খসড়ায় কিছু বলা হয়নি। চুক্তির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি নন-ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট হয়েছে। কোনো ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ শর্তে সম্মত হওয়া যায়নি বলে বাংলাদেশের সঙ্গে এখনো এগ্রিমেন্ট হচ্ছে না। যেসব বিষয়ে বাংলাদেশ সম্মত হতে পারবে না, সে বিষয়গুলো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে স্পষ্ট মতামত পাওয়া যায়নি। ৯ তারিখের বৈঠকে বা বৈঠকের পর হয়তো এসব বিষয়ে কিছু বোঝা যাবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রটি আরো জানিয়েছে, চুক্তির সব বিষয়ে যদি বাংলাদেশ সম্মত না হয় তাহলে তা স্বাক্ষর হবে না। আর যদি সম্মত হয়, তাহলে হয়তো হবে। কিছু বিষয় আছে যেগুলোয় বাংলাদেশ সম্মত হতে পারেনি। সেগুলোয় যুক্তরাষ্ট্র একমত না হলে চুক্তি স্বাক্ষর হবে না। যদি উভয় পক্ষ সম্মত হয়, তাহলে স্বাক্ষর হবে। ৯ তারিখ তাদের একটা সময়সীমা। কিন্তু সবকিছু চূড়ান্ত হওয়ার তারিখ ৯ জুলাই না। এ তারিখের পরেও আলোচনা করা যাবে।
প্রসঙ্গত, একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশী রফতানি পণ্যের প্রধান গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকপণ্য রফতানিতে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। এ হারে শুল্ক নিয়েও ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে ৭৩৪ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় বেশি ছিল। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ। অর্থমূল্য বিবেচনায় দেশটিতে বাংলাদেশের মোট রফতানির ৮৭ শতাংশই তৈরি পোশাক।